পুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আজ আমরা জানবো। মাছ হচ্ছে বাংলাদেশের আমিষের এক অন্যতম উৎস। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে বৈদেশিক উপার্জন এমনকি মানুষের দেহে যে পুষ্টি সরবরাহ করা প্রয়োজন সেটিও মাছ থেকেই আমরা পেয়ে থাকি। মাছ চাষের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। আমরা কেউ পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করি।
কেউ খালে-বিলে চাষ করে কেউ ডোবাই বা চৌবাচ্চায় চাষ করে থাকে। তবে আমাদের মধ্যে সাধারণত পুকুরের মাছ বেশি উৎপাদন করে থাকি। যেটা আমরা চাষ মাছ বলে থাকি। পুকুরের নির্দিষ্ট জায়গায় জলাশয়ে আমাদের আর্থিক দিক বিবেচনা করে অল্প পুঁজিতে বা বেশি পুঁজিতে আধুনিক ভাবে মাছ চাষ করে থাকি।
পেজ সূচিপত্রঃপুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি
- পুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি
- পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ করার পদ্ধতি
- মাছ চাষে প্রশিক্ষণ নেয়ার গুরুত্ব
- মাছ চাষে পুকুর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে
- মাছ ক্রয় করার কিছু নিয়ম
- মাছের খাবার কিভাবে দিবেন তার পরামর্শ
- মাছের রোগ বালাই দমন করার উপাই
- মাছের বাজার সম্পর্কে ধারনা থাকা
- মাছ চাষে আর্থিক পরিকল্পনা করা
- শেষ কথাঃপুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো। আপনারা এমনিতেই তো
জানেন যে মাছ আমাদের কতো আমিষের জোগান দেয়। তা ছাড়া মাছ খেলে অনেক উপকার।
শরীরের পক্ষে কোনও ক্ষতি হয় না। কারও ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয় না। কারণ অনেকে হয়তো
মাংস খেতে পারে না,কিন্তু মাছ কিনে খেতে পারে। তা ছাড়া যদি সেটা হয়ে যায় পুকুরের
মাছ তাহলে তো কোন চিন্তা নেই। কারণ পুকুরের মাছ অন্য মাছের চাইতে অনেক সস্তা দামে
পাওয়া যায়। যদি আমরা দেখি যে নদীর মাছের অনেক দাম। নদীর মাছে কোন কীটনাশক সার
ব্যবহার করা হয় না বা অন্য কোনও খাবার দেওয়া হয় না। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ভাবে তারা
খেয়ে বড় হয়ে ওঠে।
যার কারণে নদীর মাছ অনেক দামি। কিন্তু আমরা আমাদের চাষের মাছ আমরা বেশি খেয়ে
থাকি। চাষের মাছ বলতে আমরা পুকুরের মাছ কে বোঝাচ্ছি। পুকুরের মাছ বিভিন্ন রকমের
আছে। যেমন ধরেন রুই,সিলভার কাতল,তেলাপিয়া,মিনারকার্প মাছ ইত্যাদি এই মাছগুলো আমরা
সহজেই ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারি। এতে আমাদের সকলেরই শরীরের আমিষের চাহিদা
পূরণ হচ্ছে। তা ছাড়া এই মাছ আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারছি এতে বৈদেশিক
মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এরপরে আরও বিভিন্ন ভাবে
জানবো যে পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য কোন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে দ্রুতই আর লাভমান
হওয়া যায় সেই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ করার পদ্ধতি
পুকুরে মিশ্র চাষ হচ্ছে একসঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করা। এ ক্ষেত্রে আমরা
অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করে থাকি। এতে করে সব ধরনের মাছ গুলো
তাদের খাবারের সমান পর্যায়ে পেয়ে থাকে। আর এতে করে মাছ গুলো ভালো ভাবে বেড়ে
ওঠে। যাতে করে তারা সঠিকভাবে খাবার খেয়ে অল্পদিনের মধ্যে বেড়ে ওঠে বিক্রিযোগ্য হয়
এ জন্য পুকুরে মিশ্র চাষ করে থাকি। পুকুরে মিশ্র মাছ চাষ গুলোর মধ্যে
রুই,কাতল,মৃগেল,কালবাউশ, বিগহেড, কমনকার্প ইত্যাদি মাছ। এসব মাছ গুলোকে মিশ্র ভাবে
চাষ করে থাকে। এরা বিভিন্ন বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন স্তরে বসবাস করে থাকে।
উপরে বসবাস কর্ কেউ মধ্যেই বসবাস করে, কেউ পানির গভীরে বসবাস করে। এতে করে তারা
সকলেই সমানভাবে খাবার সরবরাহ পেয়ে থাকে। সব মাছ কিন্তু সন স্তরে খাবার খাই
না। কাতলা ও সিলভারকার্প ওপর স্তরে,রুই মধ্য স্তরে,আর কালবাউশ এ মৃগেল পুকুরের
তলদেশে খাবার খেয়ে থাকে।এতে করে পুকুরের যত জলদ উদ্ভিদ গুলো আছে সব গুলো তারা
খেয়ে ফেলে। তাতে খাবার খাওয়া হই আবার পুকুর পরিষ্কার থাকে। এতে করে প্রাকৃতিক খাবার
গুলোর ব্যবহার নিশ্চিত হই। সকল মাছ একত্রে চাষ করা হই বলে কম ঝুঁকিতে বেশী লাভ করা
যায়।
আরো পড়ুনঃদেশী গরু মোটাতাজাকরনের সঠিক পদ্ধতি
মাছ চাষে প্রশিক্ষণ নেয়ার গুরুত্ব
আপনি পুকুরে মাছ চাষ করবেন সেটা কীভাবে চাষ করবেন সে সমস্ত আপনার কোন ধারণা
নেই। তাহলে আপনাকে জানা কোনও ব্যক্তির কাছে পরামর্শ নিতে হবে।এখন ধরেন জানা
ব্যক্তি আপনাকে সঠিক পরামর্শ নাও দিতে পারে।কারন হলো প্রতিযোগীতা বাজারে কেউ
কাউকে ছেড়ে দিতে চাই না।আমি কি বলতে চেয়েছি আশা করি বুঝতে পেরেছেন। তাহলে আপনি
কীভাবে ধারণা পাবেন অবশ্যই আপনাকে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে
হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে আপনি মাছ চাষ সম্পর্কে সম্পূর্ণ পদ্ধতি গুলো জানতে
পারবেন।
এতে করে আপনার পুকুর ব্যবস্থাপনা ভালো করে করতে পারবেন। প্রশিক্ষন এর মাধ্যমে
জানতে পারবেন কখন কোন মাছ চাষ করতে হবে। কোন মাছ কখন চাষ করলে লাভবান হবেন। কারন
মাছ ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় আছে। তাছাড়া পুকুরের পানি কেমন থাকবে। কতোতুকু পানি থাকলে
আপনি মাছ ছাড়তে পারবেন। প্রশিক্ষণ গ্রহনের মাধ্যমে মাছের রোগ বালাই দমনে কার্যকারী
ভূমিকা গ্রহন করতে পারবেন। তাই আপনি নতুন চাষী হয়ে থাকলে আপনাকে অবশ্যই প্রশিক্ষণ
গ্রহন করতে হবে।
মাছ চাষে পুকুর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে
আপনি একজন নতুন ভাবে পুকুরে মাছ চাষ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপনি সবকিছু
করলেন তাহলে এখন আপনার কি করতে হবে পুকুরটাকে ঠিকভাবে মেরামত করতে হবে। যদি পুকুর
ব্যবস্থাপনা ভালো না হয় তাহলে আপনি যতই প্রশিক্ষণ নেন,আর যতই টাকা খরচ করুন না
কেন আপনার কোন সফলতা আসবে না। এজন্য আপনাকে প্রথম অবস্থাতে পুকুর সঠিকভাবে তৈরি
করে নিতে হবে। আপনার পুকুরের পোনা মজুদ করার পূর্বে অবশ্যই ভাল ভাবে পুকুর
প্রস্তুত করতে হবে।
- পুকুরের পার ভালোভাবে মেরামত করতে হবে। যাতে করে খুব সহজেই ভেঙে না যায়।
- অনেক সময় দেখবেন পুকুরের তলদেশে অনেক কাদা জমে থাকে। যেগুলো অনেক গ্যাস করে। এই কাদা জমে থাকা মাটি গুলোকে তুলে ফেলে দিতে হবে।
- পুকুরে যদি অনেক জঙ্গল থাকে যেমনঃ লতাপাতা, ঝোপ ঝাড় থাকলে এগুলো পচে পানি নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। আবার পুকুরে যদি জঙ্গল হয়ে থাকে তাহলে সাপ,ব্যাং বাসা বাঁধতে পারে। এতে করে মাছ খেয়ে ফেলতে পারে।
- এরপরে আপনাকে পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। পুকুর শুকিয়ে গেলে কী হবে আপনার পুকুরে রাক্ষুসে মাছ গুলো ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এতে আপনার পরবর্তীতে কোন মাছ আর রাক্ষুসে মাছ থাকবে না। তারপরেও যদি পুকুর শুকানো সম্ভব না হয় তাহলে প্রতি শতকের ৫০ গ্রাম রোটেনন প্রয়োগ করে অবাঞ্ছিত মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে।
- রাক্ষুসে মাছ গুলো অপসারণ করার পরে আপনাকে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে পানির গুনাগুন বজায় থাকবে।
- পুকুরের পাড়ে বড় বড় গাছপালা রাখা যাবে না। কারণ বড় গাছপালা থাকলে পুকুরে পাতা পড়ে।পাতা পচে যায়।এতে পুকুরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া সূর্যের আলো সরাসরি পুকুরে পড়তে পারবে না।
- পুকুরের পানিতে যাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টা সূর্যের আলো থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বড় বড় গাছ কেটে ফেলতে হবে। সম্ভব না হলে ডাল পালা গুলো ছেঁটে দিতে হবে।
- বর্ষাকালে ভরপুর পানি থাকে। কিন্তু চৈত্র মাসের দিকে তেমন কোনো পানি থাকে না। এজন্য আপনাকে চেষ্টা করতে হবে যাতে সারা বছরই আপনার পুকুরে পানি থাকে। কারণ পরিমাণ মতো পানি না থাকলে পানি সূর্যের তাপে গরম হয়ে যাবে। সূর্যের কারণে পানি গরম হয়ে মাছ মারা যেতে পারে।
তাই আপনাকে পুকুর মেরামত করার সময় অবশ্যই উপরের এই বিষয়গুলো দিকে আপনাকে নজর
দিতে হবে। কারণ একটা পুকুর যদি সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে না পারেন তাহলে আপনা্র মাছ
কখনই বেড়ে উঠবে না। তার সাথে সাথে আপনি কখনও লাভ করতে পারবেন না। তাই একটি পুকুর
প্রস্তুত অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক।
মাছ ক্রয় করার কিছু নিয়ম
আমরা এখন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানব কীভাবে আপনি মাছ ক্রয় করতে পারবেন। আমরা
এতক্ষণ ধর পুকুর প্রস্তত থেকে শুরু করে অনেক কিছু জেনেছি। এখন আমাদেরকে পুকুরের
জন্য মাছ ক্রয় করতে হবে। এখন আপনাকে ভাল মানের মাছ কিনতে হবে। এর জন্য আপনাকে
জানতে হবে। কোন মাছটা কিনলে কী ভাবে তাড়াতাড়ি মাছগুলো বড় হতে পারবে। অনেক সময়
দেখা যায় খারাপ মাছ কিনে প্রথমেই আপনি বিপদে পড়ে যান।পুকুরের জন্য আপনি যদি পোনা
মাছ কিনেন তাহলে সঠিক হ্যাচারি থেকে পোনা মাছ সংগ্রহ করতে হবে।
আবার একটু বড় ,বড় বলতে ১ কেজি তে ১০-১২টা হয় এই রকম সাইজের মাছ কিনতে হবে। তাহলে
এগুলো ২-৩মাস পর ৫০০-৭০০ গ্রাম বা তার চেয়ে বেশী ওজন হয়ে থাকে। অনেকেই দেখা যায় এক
পুকুরের মাছ অন্য পুকুরে নিয়ে এসে ছাড়ে। এই আনা নেয়ার সময় আপনাকে সাবধানতা অবলম্বন
করতে হবে। গাড়ীতে আনার সময় গাড়ীতে যাতে পানি পরিমান মত থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে
হবে।আরেকটি বিষয় মাছের পানিতে স্যালাইন ব্যবহার করতে হবে। এতে মাছ গুলো সঠিক ভাবে
অক্সিজেন পাবে। এই নিয়ম গুলো আপনাআকে অবশ্যই মানতে হবে।
আরো পড়ুনঃআরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৫ দেখে নিন
মাছের খাবার কিভাবে দিবেন তার পরামর্শ
আমি এই আর্টিকেলে আলোচনা করবো কিভাবে সঠিক খাবার দিবেন। পুকুর চাষিরা সাধারনত
মাছের খাবার হিসেবে যে খাবার প্রয়োগ করে সে ক্ষেত্রেপুকুরে মাছের দৈহিক ওজনের ওপর
খাবার প্রয়োগ করে থাকে। আপনি কি খাবার দিবেন বা দিচ্ছেন সেটা ব্যাপার না। ব্যাপার
হচ্ছে আপনি মাছ কে তার ওজন অনুযায়ী কতোটুকু খাবার দিচ্ছেন,আর সেটা মাছের চাহিদা
পূরোন হচ্ছে কিনা সেটাই আসল কথা।আপনি যদি নিম্ন ভাবে সাশ্রয়ী পদ্ধতি ব্যবহার করেন
তাহলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন বলে আমি মনে করি।
- খাবারের পচনজনিত কারনে পানির মান নষ্ট হবে না।
- খাবার অপচয় কম হয়।
- মাছের মৃত্য কম হয়।
- মাছের উৎপাদন খরচ কম থাকাই লাভ করা যায়।
খাবারের গুণগত মান ভাল না হলে মাছের উৎপাদন ভালো হয় না। মাছের খাবারের গুণগত মান
টা কেমন আছে খাদ্য ঠিক আছে কিনা তা নজর রাখতে হবে। এর জন্য আপনাকে সঠিক পদ্ধতিতে
খাবার সংরক্ষন করতে হবে। কারণ আপনি খাবার বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসবেন অনেক
বেশী করে। এই খাদ্য একদিনে শেষ হবে না। এই জন্য আপনাকে একটা গুদাম ঘরে সঠিক
পরিচর্যার মাধ্যমে খাবারকে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে যাতে করে খাবারগুলো অনেকদিন যায়
এবং মাছের গুণগত মান বজায় থাকে। তা না হলে আপনারা খাবার উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং মাছ
নষ্ট হয়ে যাবে।এতে আপনার ব্যয় বেড়ে যাবে।
মাছের রোগ বালাই দমন করার উপাই
আপনি একটি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। মাছের খাবার দিলেন সব কিছু করলেন। কিন্তু আপনি
রোগবালাই সম্পর্কে ধারণা পেলেন না। খাবার দিচ্ছেন আপনি সঠিক পরিচর্যা করছেন।
কিন্তু আপনার মাছ সঠিক সময়ে বেড়ে উঠছে না। এতে আপনার চিন্তা বাড়বে এটা স্বাভাবিক।
সেজন্য আপনাকে মাছের রোগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। পূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। যদি
আপনি রোগ সম্পর্কে বুঝতে না পারেন তাহলে সঠিকভাবে চিকিৎসা করতে পারবেন না।
চিকিৎসা করতে না পারলে আপনার মাছ বেড়ে উঠবে না, আবার মারা যেতে পারে।
তাই আপনাকে অবশ্যই মাছের রোগবালাই দমন করতে হবে। এখন জেনে নিই মাছের রোগ বালাই
কোন গুলো। মাছের ক্ষত রোগ, এটি মাছের গায়ে লাল দাগ দেখা যায়। এটি মাথা,লেজ,আর পিঠের
দিকে দেখা যায়। এই রোগ দেখা দিলে দ্রুত দমন করতে হবে। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০০
গ্রাম লবণ মিশিয়ে ৪-৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে রোগ ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া আগে থেকেই চুন
প্রয়োগ করে এই রোগ ভাল করা সম্ভব। পেট ফোলা মাছ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। পেটে পানি জমার
কারনে পেট ফুলে যায়।অনেক সময় মাছ উপরে ভাসতে থাকে আর খাবি খায়।
এটার জন্য পুকুরে প্রতি শতাংশে ১ কাজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। আবার পাখনা বা
লেজ পচা রোগ দেখা যায়। সাধারনত মাছের পাখনা গুলো আক্রান্ত হয়ে থাকে। পানির ক্ষার
সল্পতা ও পিএইচ ঘাটতি দেখা দিলে এই রোগ হয়ে থাকে। এ অবস্থায় পটাশযুক্ত পানিতে ৪-৫
মিনিট ডুবিয়ে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। তারপর পুষ্টির অভাবে মাছের রোগ দেখা
যায়। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাবে এই রোগ দেখা দিতে পারে। তাছাড়া খাবারে আমিষের
অভাব দেখা দিলে মাছের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যহত হয়। তাই পানিতে ভিটামিন ও খনিজ লবণ
মিশিয়ে খাওয়ানো হলে এই রোগ দূর হয়।তাছাড়া আপনি চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক পদক্ষেপ
নিবেন।
মাছের বাজার সম্পর্কে ধারনা থাকা
আমি এতোক্ষন যা আলোচনা করলাম তার মধ্যে প্রয়োজনীয় আর্টিকেল হলো বাজার
সম্পর্কে ধারনা থাকা। আপনাকে মাছের বাজার সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে।
আপনি মাছ চাষ করলেন। মাছ বড় হবে বিক্রির মতো অবস্থা হবে।মাছ তো বিক্রি
করবেন,কিন্তু আপনি কি জানেন কোন বাজারে কি দাম চলছে। এটা যদি আপনি না জানেন তাহলে
সঠিক বাজার ধরতে পারবেন না। এতে আপনি শেষ মেষ লোসের মূখ দেখবেন। তাই আপনাকে বাজারে
মাছগুলি বিক্রি করতে আগে থেকেই বাজার মনিটরিং করতে হবে। আপনি যদি সঠিক দাম জানতে
পারেন। ভালো সম্ভাবনা থাকতে পারে যা আপনাকে পাইকারি ক্রেতা সহজে ঠকাতে পারবে না।
কারন মাছের বাজার কখনওই একরকম থাকে না। আজ একদম আগামীকালকে অন্য একদাম। এতে
করে দরদাম ওঠানামার কারণে বাজারে দামের তারতম্য ঘটে থাকে। দেখতে হবে কোন সময়ে
মাছের দাম বেশি থাকে। অনেক সময় যখন আমরা দেখি বর্ষাকালে বাজারে ভরপুর মাছ থাকে
। তখন মাছের দাম অনেকটাই সীমিত পর্যায়ে থাকে। কিন্তু অন্য সময় যখন মাছের
ক্রান্তিকাল চলে তখন মাছের দাম চড়া থাকে। এতে করে আপনি ওই সময় যদি মাছটা ধরে
বাজারে বিক্রি করেন। তাহলে আপনি অনেকটাই বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারবেন বলে আমি
মনে করি। তাই আপনাকে বাজার সম্পর্কে সঠিক ধারনা থাকা টা অনেক জরুরী।
আরো পড়ুনঃভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
মাছ চাষে আর্থিক পরিকল্পনা করা
মাছ চাষে আর্থিক পরিকল্পনা করা অনেক জরুরি। কারণ আপনি বুঝতে পারছেন প্রতিটি
ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কোনও উপাই নেই৷ আর অর্থ না থাকলে এগোতে পারবেন না। আপনি
ট্রেনিং থেকে শুরু করে পুকুর পস্তুত, মাছ ছাড়্ খাবার দেয়া, রোগবালাই দমন সব
কিছুতেই আপনাকে অর্থের উপর নির্ভর করতে হবে। আপনি যদি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে অর্থ
জোগান দিতে না পারেন তাহলে শেষ মেষ কোনও পরিকল্পনা কাজে আসবে না। এখন আপনি ধরুন
পুকুর প্রস্তত করার পর মাছ কিনে পুকুরে মাছ ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে
আপনি এবার খাবার কিনতে পারছেন না।
মাছের জন্য যে সব খাবারগুলো লাগবে বা রোগ ভালো করার জন্য যেসব ওষুধ গুলো লাগবে
সেগুলো কিনতে আপনার কাছে কোনও অর্থ নাই। তাহলে কি আপনি সঠিক পরিকল্পনা কোন কাজে
আসবে কখনও কোনও কাজে আসবে না। তাই আপনাকে কাজ শুরু করার আগেই অর্থের দিকটা অবশ্যই
বিবেচনা করতে হবে।পুকুরে মাছ ছাড়া থেকে মাছ বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত কতটুকু
অর্থ বাজেট লাগবে সেটা আপনাকে আগে নির্দিষ্ট করে কাজে এগোতে হবে। তা না হলে আপনার
একটা বিষয় জন্য সকল কাজকর্মগুলি ভেস্তে যেতে পারে। এটা আপনার জন্য প্রথম অবস্থায়
যদি হয়, আপনি তাহলে অনেক বড় ধাক্কা খেয়ে যাবেন। পরবর্তীতে আপনি আর মাছ চাষ করতে
চাইবেন না। তাই আপনাকে অবশ্যই আর্থিক পরিকল্পনা সঠিকভাবে করতে হবে।
শেষ কথাঃপুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি
পুকুরে মাছ চাষ করার পদ্ধতি সম্পর্কে এতোক্ষন আপনি জানতে পারলেন। যে কোনও ধরণের
একটি ব্যবসা করার জন্য আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ভাবতে হবে। কারণ আপনি যা ভাববেন
অর্ধেক হবে অর্ধেক হবে না। আবার হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এটা কেউ কখনও
ভবিষ্যতের কথা বলতে পারবে না। আজকের আর্টিকেলে পুকুরে মাছ চাষ করার বিষয়ে আলোচনা
করেছি। জানিনা কতটুকু আমি আমার মেধা থেকে আপনাদের উদ্দেশে কিছু লিখতে পেরেছি।
যতটুকু লিখেছি আশা করি আপনারা সেই বিষয়গুলো পরে অনেক কিছু ধারণা পেয়ে যাবেন।
আমি এটুকুই বলব বেশি জানার জন্য আপনাকে সরকারিভাবে যে প্রশিক্ষণ করানো হয়।
সে প্রশিক্ষণ গুলো করলে আরো বেশি ধারণা পাবেন। তা ছাড়া রোগ দমনের জন্য
আপনি অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। মাছ চাষ করার ব্যাপারে এগোতে
পারেন কারণ সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ সঠিক কাজে না লাগলে কখনও সঠিক ফলাফল আশা করা
যায় না।সব শেষে বলতে চাই যদি আপনার এতটুকুও ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুর
কাছে শেয়ার করবেন। যাতে করে তারাও মাছ চাষ করতে গেলে কিছু হলেও ধারনা পেয়ে থাকে।
শেষ কথা বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url